বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। দীর্ঘদিনের অনেক অমীমাংসিত সমস্যা সমাধান হয়েছে, পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে বাকিগুলোরও সমাধান হবে।
রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির উদ্যোগে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য ত্বরান্বিতকরণের লক্ষ্যে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
রংপুর চেম্বার ভবনের আরসিসিআই অডিটোরিয়ামে রংপুর চেম্বারের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটুর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও রংপুর চেম্বারের সাবেক সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।
মতবিনিময় সভার শুরুতেই বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কী নোট পেপার উপস্থাপন করেন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও রংপুর চেম্বারের সাবেক সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।
বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, ভারত-বাংলাদেশ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে। এ দেশ হচ্ছে ভারতের প্রথমসারির ব্যবসায়িক অংশীদার। আমাদের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগীও বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, মোংলা ও মিরসরাইয়ে ভারতের দুটো অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভারতের বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বিশেষ করে অটোমোবাইলের যন্ত্রাংশ উৎপাদন, হালকা প্রকৌশল পণ্য উৎপাদন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন অনেকে।
বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, পণ্য বৈচিত্র্যকরণ হলে ভারতেও রফতানি বাড়বে এবং ঘাটতি অনেক কমে যাবে। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আরও বাড়াতে চায় ভারত সরকার। বাংলাদেশের অবকাঠামো ও যোগাযোগে উন্নতি হচ্ছে। কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও আগামীতে বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বহুগুণে বাড়বে বলে মতামত ব্যক্ত করেন।
পরিশেষে তিনি বলেন, বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করে দ্রুততম সময়ে ভারত সরকারের অর্থায়নে রংপুর আইটি পার্কের কার্যক্রম শুরু হবে।
পরে উন্মুক্ত আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন দিনাজপুর চেম্বারের সভাপতি রেজা হুমায়ুন ফারুক চৌধুরী শামীম, বুড়িমারী স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু সায়েদুজ্জামান, সোনাহাট স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক।
ব্যবসায়ী নেতারা বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্যগুলোর ওপর রাজ্য সরকারের আরোপিত শুল্ক ও অশুল্ক বাধার কারণে ভারতে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না বলে মতামত ব্যক্ত করেন। এছাড়া ব্যবসায়ী নেতারা পণ্য খালাসের সুবিধার্থে ভারতীয় কাস্টমস কার্যালয় সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চালু রাখা এবং সহায়ক ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ভারতীয় হাইকমিশনারকে অনুরোধ জানান।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন- রংপুর চেম্বারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা ও পরিচালক, রংপুর জেলার ৮ জেলার চেম্বারের নেতা, রংপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি, আমদানি-রপ্তানিকারক, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা।
এর আগে ভারতীয় হাইকমিশনার সকাল সাড়ে ১০টায় মঙ্গলবার রংপুর সিটি করপোরেশনে আসেন। সেখানে তিনি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভা করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার (রাজশাহী) সঞ্জিব কুমার ভাট্টি, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন মিঞা, প্যানেল মেয়র মাহমুদুর রহমান টিটু প্রমুখ।
ভারতীয় হাইকমিশনার রংপুর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিদর্শন করেন। রংপুর সিটি করপোরেশনকে দেওয়া উপহারস্বরূপ লাইফ সাপোর্ট সংবলিত অত্যাধুনিক অ্যাম্বুলেন্স হস্তান্তর করেন।
একই দিন দুপুর সাড়ে ১২টায় ভারতীয় হাইকমিশনের অর্থায়নে নির্মিত রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের নবনির্মিত একাডেমিক ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে গভর্নিং বডির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রামকৃষ্ণ সোমানীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির হিসেবে বক্তব্য রাখেন- ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার (রাজশাহী) সঞ্জিব কুমার ভাট্টি, রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, মাহিগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ জাহানারা বেগম প্রমুখ।
এ সময় গভর্নিং বডির সদস্য, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় রংপুরের ঐতিহ্যবাহী সিঙ্গারা হাউজ পরিদর্শন করে নগরী গ্র্যান্ড প্যালেস হোটেলে নৈশভোজে যোগ দেন। সেখানে সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, রংপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি মাহবুব রহমান হাবুসহ সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা, সুধীজন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও গত সোমবার সন্ধ্যায় রংপুরের ঐতিহ্যবাহী সিঙ্গারা হাউজ পরিদর্শন করে রাতে নগরী গ্র্যান্ড প্যালেস হোটেলে নৈশভোজে যোগ দেন। সেখানে সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, রংপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি মাহবুব রহমান হাবুসহ সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা, সুধীজন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।