যুক্তরাজ্যের শহর গ্লাসগোতে জলবায়ু পরিবর্তনে পৃথিবীর ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর প্রত্যাশার বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন, কপ-২৬’র আসর বসবে। ওই আসরে তিনটি প্রস্তাব নিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঝুঁকির মুখে থাকা ৪৮টি দেশের সংগঠন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম-সিভিএফ’র বর্তমান সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকা ছাড়বেন রোববার (৩১ অক্টোবর) সকালে।
এ প্রসঙ্গে শনিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ইউরোপের তিন দেশে প্রধানমন্ত্রীর সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি জানান, তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনতে ‘ন্যাশনালি ডিটারমিন্ড কনট্রিবিউশনস (এনডিসি)’ ঠিক করা, ১০০ বিলিয়ন ডলারের জলবায়ু তহবিলের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাড়াতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয় তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছি, প্রত্যেক দেশ তাদের এনডিসি এমন জোরালোভাবে তৈরি করবে, যাতে পর্যায়ক্রমে আমাদের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে থাকে। এখন দুই ডিগ্রির মতো হয়ে যাচ্ছে, এটা কমাতে হবে। বিশেষ করে শিল্পোন্নত দেশকে এক্ষেত্রে ভূমিকা নিতে হবে। কারণ ৮০ ভাগ কার্বন নিঃসরণ করে জি২০ দেশ। তারা যাতে জোরালোভাবে কাজ করে, এমিশনটা কমে।
জলবায়ু তহবিলের বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৫ সালে প্যারিস সম্মেলনে উন্নত দেশগুলো অঙ্গীকার করেছিল, জলবায়ু তহবিলে ২০২০ থেকে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার অনুদান দেবে। আমরা চাই, এবার সেটির বাস্তবায়ন হবে, তোমরা শুধু মুখে মুখে বলো, এবার তোমাদের অবশ্যই দিতে হবে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সহযোগিতার বাড়ানোর বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণে বাংলাদেশের অবদান শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ। এটি একেবারে নিতান্ত কম। আমরা চাই যে, আমরা আরও কমাব। কমাতে গেলে, আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি অধিক পরিমাণে চাই। আমরা মুজিব প্রসপ্যারিটি প্ল্যান নিয়েছি এবং এটা খুব এগ্রেসিভ প্ল্যান।
সেই গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গতকারী দেশের নেতাদের কাছে বড় দাবি থাকছে প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরন শূন্যে নামিয়ে আনা। থাকছে ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুত জলবায়ু তহবিলের বাস্তবায়নেরও।
এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তন রোধ, অভিযোজন ও অর্থায়নকে আহ্বান জানিয়ে আসতে পারে ঢাকা-গ্লাসগো ঘোষণাও। এর পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক ইস্যু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী পৃথক বৈঠক করবেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও শ্রীলংকার রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপক্ষের সঙ্গে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বুধবার (৩ নভেম্বর) রাষ্ট্রীয় সফরে লন্ডনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। এখানে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত ব্রিটেনের প্রিন্স অফ ওয়েলস এবং প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
এরপর ৯ নভেম্বর ফ্রান্সে সফর করবেন শেখ হাসিনা। এখানে দেশটির রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসার কথা রয়েছে তার। এছাড়া, ফ্রান্সের শীর্ষ ফরাসি ব্যবসা সংগঠনেরও বাণিজ্যিক আলোচনা অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একে আব্দুল মোমেন জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তার নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কার ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর দ্য ক্রিয়েটিভ ইকোনোমি’ দেওয়া হবে ১১ নভেম্বর প্যারিসে। এ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়ার কথা রয়েছে শেখ হাসিনার।
এছাড়া, ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপনের একটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।