জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ‘তিন ধরনের শত্রু আমাদের চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে, তাদের আক্রমণের শিকার আমরা হচ্ছি। প্রথমত উগ্র ধর্মবাদী জামায়াত-শিবির সাম্প্রদায়িক চক্র, যারা দৃশ্যমান বাইরের শক্তি। দ্বিতীয়ত, ভেতরের শত্রু হচ্ছে প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু সাম্প্রদায়িক কর্মচারী। তৃতীয়ত, রাজনৈতিক দল ও অঙ্গনে অনুপ্রবেশকারী কতিপয় সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি। তাদের কারণে বারবার হামলা হচ্ছে এবং তা ঠেকাতে আমরা ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছি। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে হলে এই তিন শ্রেণিকে নির্মূল করতে হবে।’
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস: রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক দলের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন হাসানুল হক ইনু। এ সময় তিনি সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক হামলার বিচারে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল করা, ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে ফিরে যাওয়া এবং জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি জানান।
হাসানুল হক বলেন, ‘হামলাটা যদিও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর করা হয়েছে, আসলে এটা বাংলাদেশ, রাষ্ট্র ও সংবিধানের বিরুদ্ধে করা হয়েছে। সুতরাং এই লড়াই কেবল হিন্দু সম্প্রদায়ের একার লড়াই না, দেশের সব মানুষের লড়াই।’
জাসদ আয়োজিত এ আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা সাধারণ মানুষ করেনি, ভাড়া করে করানো হয়েছে। তিনি মনে করেন, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মানবিকতার আন্দোলন জোরদার করতে পারলে অশুভ শক্তির বিনাশ হবে।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ও প্রশাসন গড়ে তোলার জন্য প্রশাসনের স্তরে স্তরে লুকিয়ে থাকা সাম্প্রদায়িক ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাঙ্গনে সাম্প্রদায়িকীকরণ রুখে দিতে হবে। ঐতিহাসিক সংস্কৃতির পুনর্জাগরণে সাংস্কৃতিক আন্দোলন জোরদার করতে হবে। ধর্মনির্ভর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অংশীদারত্বের রাজনীতি পরিহার করতে হবে। কৌশলের নামে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে নিজেদের দুর্বলতা ও মাঝামাঝি পথে চলা বন্ধ করতে হবে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নিম চন্দ্র ভৌমিক, জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ার হোসেন, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য সুশান্ত দাস।