মহামারি কোরনায় শ্বাসরুদ্ধকর আতঙ্কের এক কাল পেরিয়ে করোনা সংক্রমণে এখন অনেকটাই স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ। রোগী শনাক্তের হার ও মৃত্যুর সংখ্যা কমার পাশাপাশি হাসপাতালগুলোও এখন অনেকটাই ফাঁকা।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বস্তিকর এই পরিস্থিতি ধরে রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি বিকল্প নেই অধিকসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে দ্রুত সময়ে টিকার আওতায় আনার।
একটু পরপর সাইরেন বাজিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের ছুটে আসা, রোগী নিয়ে স্বজনদের ছোটাছুটি, একটি শয্যার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা, চিকিৎসকদের তোড়জোড়। ক’দিন আগেও রাজধানীর হাসপাতালগুলোর চিত্র ছিল এমনই। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি কী?
ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের প্রধান ফটক পেরোতেই ট্রায়াজ এরিয়া। করোনা আক্রান্ত কিংবা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা কিংবা ভর্তির কার্যক্রম পরিচালিত হয় এখান থেকেই। দুজন নার্স, দুজন মেডিকেল অফিসার ও কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মীর একটি টিম অপেক্ষায়। তবে সকাল গড়িয়ে দুপুর পর্যন্ত ভর্তির জন্য আসেনি একজন রোগীও।
দায়িত্বরতরা বলছেন, এখানে রোগীকে অ্যান্ট্রি করার জন্য একজনকে শুধু খাতা নিয়ে বসে থাকতে হতো। এমন একটা সময় পার করেছি। কিন্তু এখন পরিস্থিতি অনেক স্বাভাবিক।
মুমূর্ষু রোগীর শেষ ভরসাস্থল আইসিইউ। কিছুদিন আগেও প্রতিটি শয্যায় রোগী থাকলেও এখন অধিকাংশই ফাঁকা। চিকিৎসকরাও যেন অনেকটাই চাপমুক্ত।
ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে আইসিইউসহ সেন্ট্রাল অক্সিজেনসংবলিত এক হাজার শয্যার হাসপাতালটির এই ওয়ার্ডটির আসন সংখ্যা ৫২। যদিও অধিকাংশই ফাঁকা। আবার যারা ভর্তি আছেন তাদের কেউই কোভিড পজিটিভ রোগী নন।
একটা সময় একটি আইসিইউ শয্যার জন্য কারো সুস্থ হওয়া কিংবা মৃত্যুর অপেক্ষা প্রহর গুনতে হয়েছে স্বজনদের। কিন্তু পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ বদলে গেছে। দেশের সর্বোচ্চ আইসিইউ সংবলিত ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালের ২১২টি শয্যার ১৮৫টিই ফাঁকা, যা করোনা শনাক্তের হার কমার পাশাপাশি রোগীর জটিলতা কমে আসারও ইঙ্গিত দেয়।
দায়িত্বরতরা বলছেন, আগে অনেক জটিল রোগী আমরা পেয়েছি। এমন অনেক হয়েছে, আমরা সিট দিতে পারছি না। রোগীরা মারা যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতেন যে কেউ একজন মারা গেলে আইসিইউর সিটি পাবেনন। আইসিইউতে মৃত্যু সনদ লেখার ওপরই আমরা থাকতাম।
করোনা সংক্রমণের নিম্নমুখী এই প্রবণতাকে আশাব্যঞ্জক বললেও ধরে রাখাকেই সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, সুরক্ষার নির্দেশনা এবং সেটি মেনে চলার কার্যক্রম নেওয়া হয়েছিল রাষ্ট্রীয়ভাবে। পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন ও লকডাউন- সব মিলিয়ে এটার প্রভাব এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, সংক্রমণ যে পর্যায় নেমে এসেছে, সেটা নিঃসন্দেহে স্বস্তির। এখন দেখার বিষয়, এই স্বস্তিটা আমরা দীর্ঘস্থায়ী করতে পারি কি না। অনেক দেশ টিকাতে অনেক এগিয়ে গেছে। সেখানে আমাদের টিকার হার অত্যন্ত কম।
দেশে বর্তমানে করোনা শনাক্তের হার ২ শতাংশের নিচে নেমে এলেও সুযোগ নেই ন্যূনতম অবহেলার।