কুমিল্লাসহ সারা দেশে সাম্প্রদায়িক হামলার জন্য সরকারকে দায়ী করছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা। কারণ, তাঁরা মনে করেন সরকারের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদ ও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ছাড়া এ ধরনের হামলা ও ভাঙচুর কয়েক দিন ধরে চলতে পারে না। তাঁরা এসব ঘটনায় জড়িত লোকজনকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টনে মৈত্রী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা এই দাবি জানান।
কুমিল্লাসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ও মন্দির সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা। এ সময় তাঁরা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরের পুরোহিত, পূজারি, আহত ও নিহত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, দেশে গত কয়েক দিনের ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জন্য সরকারই দায়ী। এই সরকারের আর ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। ব্যর্থতার দায় নিয়ে এখনই পদত্যাগ করা উচিত।’ তিনি কুমিল্লা, হাজীগঞ্জ, চৌমুহনী, রামগঞ্জ, রামগতি, বাঁশখালী, কক্সবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, খুলনা, ফেনী, রংপুরসহ সারা দেশে যাঁরা হামলা চালিয়েছেন, যাঁরা মদদদাতা রয়েছেন, তাঁদের সবাইকে চিহ্নিত করার দাবি জানান।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, সরকারের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদ ও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ছাড়া এ ধরনের হামলা ও ভাঙচুর কয়েক দিন ধরে চলতে পারে না। কারণ, সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে। তাদের কাজই হলো যে কোনো সন্ত্রাস ও সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের পরিকল্পনার আগাম তথ্য সংগ্রহ করা। কিন্তু পূজাকে কেন্দ্র করে যে সহিংসতা সারা দেশে ঘটল, তার খবর সংগ্রহ করতে কি গোয়েন্দারা ব্যর্থ হয়েছেন? আর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটতে দিয়ে, ঘটনার পর এখন সরকার অসাম্প্রদায়িক সেজে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে।
মন্দিরের হামলার দায় সরকারের—মন্তব্য করে বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, এই ব্যর্থতার দায়ে অবিলম্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অপসারণ করতে হবে। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলা-উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সিভিল প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের অবহেলা ও ব্যর্থতার অপরাধে তাঁদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সাম্প্রদায়িক হামলা জাতির জন্য অশনিসংকেত মন্তব্য করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেন, ‘আমরা দেখছি, সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে শাসক শ্রেণি এবং দলগুলো অপরাজনীতি করছে। রামুতে সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে, নাসিরনগরেও হামলা হয়েছে। এই উপমহাদেশের যে রাজনীতি, আমরা দেখছি, ভারতে হিন্দুত্ববাদী সরকার ক্ষমতায়, তারা হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এসব ঘটনায় লাভবান হচ্ছে হেফাজত, জামায়াতসহ সাম্প্রদায়িক শক্তি। এসব ঘটনা উপমহাদেশের গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত।’
লিখিত বক্তব্যে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা আরও বলেন, এই সরকার হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, জাতিধর্ম–নির্বিশেষে বাংলাদেশের সব নাগরিকের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে সরকার একদিকে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটতে দিয়ে দেখাতে চায়, দেশে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তাই তাদের দমনের নামে, ভোটারবিহীন ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে চায়। অন্যদিকে ভারতেও বিজেপি সরকার বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক হামলাকে কাজে লাগিয়ে ওই দেশে হিন্দুত্ববাদ জাগিয়ে তুলে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চায়।
সংবিধানে ৩২ ধারা পুনঃস্থাপনের দাবি জানিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা বলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। সংবিধান, রাষ্ট্রীয় আইন-বিধিবিধান, পাঠ্যপুস্তক থেকে সাম্প্রদায়িক বক্তব্য ও লেখা বাদ দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ আল কাফি রতন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশাররফ হোসেন নান্নু, বাসদের (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নেতা মানস নন্দী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য আকবর খান, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কমরেড বাচ্চু ভূঁইয়া প্রমুখ।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা জানান, ২১ অক্টোবর দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস প্রতিরোধ দিবস কর্মসূচি পালন করা হবে। ২২ অক্টোবর বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রতিনিধিরা রংপুরের পীরগঞ্জে জেলেপল্লি পরিদর্শনে যাবেন।