বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:১৮ অপরাহ্ন

মোবাইল ফোন ব্যবহারে শিশুদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২১
  • ৭ Time View

দেশে স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে গত এক বছরে বেড়েছে মোবাইল ফোন ও গেজেট আসক্তি। এ কারণে করোনা মহামারি চলা অবস্থায় গত বছর জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২১টি জেলায় এক হাজার ৮০০ শিক্ষার্থীর ওপর দেশের সাত প্রতিষ্ঠান এক গবেষণা পরিচালনা করে।

করোনা মহামারির সময় মোবাইল ফোন ও গেজেটে আসক্ত হয়েছে ৬৭ শতাংশ স্কুলশিক্ষার্থী।
এই কারণে বেড়ে গেছে মাথাব্যথা, দৃষ্টিশক্তি জটিলতা ও মানসিক সমস্যার। দেশের সাত প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণায় দেখা যায়, ৬৮ ভাগ শিক্ষার্থী দিনে ২ থেকে চার ঘণ্টা মোবাইল ফোনে সময় কাটাচ্ছে। নয় ভাগ শিক্ষার্থী কম্পিউটারের স্ক্রিনে ও আট ভাগ ট্যাবে দিনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করছে। দেশের ৭০ ভাগ শিক্ষার্থীই শারীরিক কোনো কাজ বা খেলাধুলার অবকাশ পায়নি ২০২০ সালে এবং তাদের ৫০ ভাগ ঘরের বাইরে কোন শারীরিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ একেবারেই পায়নি।

মাত্র ২৫ ভাগ শিক্ষার্থী গেজেট ব্যবহার করেছে নিয়মিত অনলাইন ক্লাসের জন্য। ৪০ ভাগ শিক্ষার্থী কার্টুন, নাটক ও চলচ্চিত্র দেখার কাজে, ২৭ ভাগ শিক্ষার্থী সমাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার এর জন্য এবং ১৭ ভাগ শিক্ষার্থী গেমস খেলার জন্য গেজেট ব্যবহার করেছে।

ডায়াবেটিস ও হরমোন রোগ বিভাগের প্রধান ডা. ফারহানা আক্তার বলেন, ১৮৩০ টি স্যাম্পলের মধ্যে ৮৭ ভাগ শিশুই কিন্তু এটিতে আসক্ত ছিল। এর মধ্যে ৬৮ ভাগ শিক্ষার্থী ব্যবহার করেছে স্মার্ট ফোন, ৯ ভাগ কম্পিউটার আর ৮ ভাগ ট্যাব ব্যবহার করেছে। যাদের পরিবারে অর্থ উপাজন বেশি তারা গেজেট ব্যবহারের পরিমাণ বেশি। আর যাদের বাবা-মা বেশি শিক্ষিত তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার বেশি।

করোনা মহামারি শুরুর আগে যেখানে ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক সমস্যাগুলোর মধ্যে প্রধান ছিল ডায়রিয়া, চুলকানি, পেট ব্যথা, জ্বর ও সর্দি। সেখানে গত দেড় বছরে মাথাব্যথা, দৃষ্টিশক্তি জটিলতা, ঘুমের সমস্যা, বিষণ্ণতা ও খিটখিটে মেজাজ এবং জ্বর সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। ঘরবন্দি হয়ে থাকা ও গেজেটের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তির কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন গবেষকরা।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনলজি বিভাগের শিক্ষক -মুখ্য তত্ত্বাবধায়ক ড. এস এম মাহবুবুর রশিদ বলেন, করোনা মহামারি সময়টাতে মাথাব্যথা, দৃষ্টিশক্তি জটিলতা, ঘুমের সমস্যা, বিষণ্ণতা ও খিটখিটে মেজাজ এবং জ্বর সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়, যা আগের বছরগুলোতে কোনোভাবে অনুভব করেনি। আমরা মনে করি গেজেটের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি সেই সঙ্গে শারীরিক কর্মকাণ্ডে সুযোগ না পাওয়ায় এ বিরূপ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই সমস্যা যদি দীর্ঘমেয়াদি হয় তাহলে আমাদের দেশের জন্য একটা আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

শিশুদের জন্য শারীরিক পরিশ্রম বাড়িয়ে গেজেটনির্ভরতা কমানো না গেলে দীর্ঘমেয়াদি অবস্থায় গিয়ে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই শিশুদের গেজেট আসক্তি কমানোর জন্য পারিবারিকভাবে বিভিন্ন উদ্যোগের বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ এ চিকিৎসক ডা. ফারহানা আক্তার।

তিনি আরও বলেন, বাবা-মা সবার উচিত তাদের সন্তানদের গেজেট আসক্তিটা কমানো, শারীরিক পরিশ্রমটা বাড়ানো এবং সুষম খাবার খাওয়া। এক্ষেত্রে স্কুলের শিক্ষকদের একটা ভূমিকা আছে। করোনাকালীনে শিশুরা অনলাইনে ক্লাস করেছে, সেহেতু তারাও জানেন শিশুরা কতটা সময় অনলাইনে থাকছে। আর শিশুরা যেহেতু শিক্ষকদের কথা শোনে তাই তাদেরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। আমেরিকান একাডেমিক প্যাডিয়েট্রিক অনলাইন স্ক্রিন গাইডলাইনের তথ্যমতে, দুই ঘণ্টার বেশি স্ক্রিন টাইমে থাকা ঠিক নয়। আর দুই বছরের নিচে বাচ্চাদের পুরোপুরি স্ক্রিনে থাকা যাবে না।

সবচেয়ে বেশি মোবাইল ও গেজেটের ব্যবহার দেখা গেছে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষার্থীদের মধ্যে। সবচেয়ে কম দেখা গেছে, মাদ্রাসা ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023 Jagoroni TV
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com