গত ৩০ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার তাকে ইতালির আদালত ১৩ বছর ২ মাসের কারাদণ্ড দেয়। তৎকালীন ক্ষমতাসীন অভিবাসন বিরোধী দল লেগ্গা নর্দ এই মামলার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে। তার কাছে থেকে হাজারও আফ্রিকান, এশিয়ান ও শতাধিক বাংলাদেশিও সহযোগিতা পেয়েছিল ।
ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালির দক্ষিণ উপকূলে প্রতিবছর হাজার হাজার অবৈধ অভিবাসীর প্রবেশ চলছে যুগ যুগ ধরে। যুদ্ধ, নির্যাতন ও ক্ষুধায় পালিয়ে আসা শিশু,নারী ও পুরুষদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন ক্যালাব্রিয়া প্রদেশের সাগর তীরের ছোট্ট শহর রিয়াসের প্রাক্তন মেয়র ডোমেনিকো ‘মিমো’ লুকানো।
তার সাহায্য ও মানবিক কর্মকান্ড দেশে ও বিদেশে ব্যাপক প্রশংসা লাভ করেছিল। দেশি- বিদেশি পুরস্কারের সঙ্গে,২০১৬ সালে বিখ্যাত ফরচুন ম্যাগাজিনে বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ জন ব্যক্তির তালিকায়ও স্থান করে নিয়েছিলেন তিনি।
এদিকে আদালতের এমন রায় ঘোষণার পরপরই সারা ইতালিতে এই বিচারের রায় নিয়ে হইচই পড়ে যায়। কারণ মেয়র মিমো অভিবাসন বান্ধব নেতা হিসেবে ইতালি ও আন্তর্জাতিক পরিচিত মুখ। তার নেয়া কর্মসূচি ‘রিয়াস’ মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল ইতালিতে।
এমন একজন অভিবাসন বান্ধব নেতার কারাদণ্ডের ঘোষণায় ব্যথিত ইতালিতে বসবাসরত প্রবাসী অভিবাসীরা। তাকে অবৈধ অভিবাসীদের সমর্থন, প্রতারণা, আত্মসাৎ, প্রশাসনিক পদের অপব্যবহারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
এদিকে আইনের জটিল সমীকরণে নিম্ন আদালতে মিমো লুকানোর বিরুদ্ধে মামলার রায় হলেও উচ্চ আদালতের আপিলে তা টিকবে না বলে মনে করেন আইনজীবী জোউলিয়ানো পিসাপিয়া।
সেই সঙ্গে ইতালির বিখ্যাত ক্রিমিনাল প্রসেকিউটর আন্দ্রেয়া ডাকুয়া বলেন মামলাটি বোধগম্য নয় এবং অযৌক্তিক, চূড়ান্তভাবে তা বিশ্বাস ও প্রমাণের বাইরে যাবে।
তবে মামলার রায়ের পর মিমো লুকানো বলেন তিনি তার শহরের মানুষের উন্নয়নে এবং ভূমধ্যসাগর পারি দিয়ে যুদ্ধ, নির্যাতন ও ক্ষুধায় পালিয়ে আসা শিশু,নারী ও পুরুষের সাহায্যে সবসময় হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ।
এদিকে বামপন্থী মেয়র মিমো সাজা ভোগের সম্মুখীন হচ্ছে সত্যি, কিন্তু সেই সময়ের তৎকালীন ইতালির উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বর্তমানে বিরোধীদলীয় নেতা মাওিয়ো সালভেনি ইতালির মাটিতে অভিবাসন উদ্ধারকারী জাহাজকে নামতে না দেওয়ায় ও অপহরণের অভিযোগে একটি মামলায় বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন।
এই মামলাটি চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষায় আছে। প্রচলিত আইনে দোষী সাব্যস্ত হলে,তার ১৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে বলে জানিয়েছেন পাবলিক প্রসিকিউটর। এমনটা হলে ইতালির চলমান রাজনীতিতে একটা প্রচণ্ড ভূমিকম্প নেমে আসবে বলে মনে করছেন দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।