ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রোর মন্ত্রিসভার অন্তত পাঁচ সদস্যের ফোনে পেগাসাস স্পাইওয়্যারের আলামত পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানী ওয়েবসাইট মিডিয়াপার্টের প্রতিবেদন এমন তথ্য দিয়েছে।
মাসদুয়েক আগে গার্ডিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের একটি কনসোর্টিয়ামের ফাঁস করা তথ্যে ফরাসি কর্মকর্তাদের ফোনে ইসরায়েলি পেগাসাস স্পাইওয়্যারের উপস্থিতির তথ্য দেওয়া হয়েছিল।প্রতিবেদনটিতে বিভিন্ন অজ্ঞাত ও গোপন গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দেওয়া হয়েছে।
বলা হয়েছিল, ম্যাঁক্রোসহ ফরাসি মন্ত্রিসভার অন্তত ২০ সদস্যের ফোনে স্পাইওয়্যার পাওয়া গেছে। তবে মিডিয়াপার্টের প্রতিবেদনে ফাঁস করা তথ্যে পাঁচ ফরাসি মন্ত্রীর মোবাইল ফোন সফলভাবে হ্যাকড হয়েছিল কিনা; সেই তথ্য দেওয়া হয়নি। কিন্তু এনএসও গোষ্ঠীর তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়ারের টার্গেটে ছিলেন ওই মন্ত্রীরা।
মিডিয়া পার্টের খবরে বলা হয়েছে, শিক্ষা, আঞ্চলিক সংহতি, কৃষি, আবাসন ও বিদেশবিষয়ক মন্ত্রীর ফোনে পেগাসাস ম্যালওয়্যারের আলামত পাওয়া গেছে। মন্ত্রীরা হলেন, জঁ-মিশেল ব্ল্যাংকোয়ার, জ্যাকুলিন গোরল্ট, জুলিয়ান ডেনোমারেন্ডি, ইমানুয়েল ওয়ারগন ও সেবেস্তিয়ান লেকোরনু।
কিন্তু তারা যখন পেগাসাসের নিশানায় পড়েছেন, তখন সবাই মন্ত্রী পদমর্যাদায় ছিলেন না। ২০১৯ সালে তাদের ফোনে পেগাসাস আক্রমণ করেছে। যদিও ২০২০ সালে এটি খুব বেশি ছিল না।
এলিসি প্রাসাদ জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর কূটনৈতিক উপদেষ্টার ফোনও পেগাসাসের টার্গেটে ছিল। জুলাইয়ের শেষ দিকে তাদের ফোনের ফরেনসিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে সন্দেহভাজন স্পাইওয়্যারের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
ইসরায়েলি এনএসও কোম্পানির নজরদারির সফটওয়্যার পেগাসাসকাণ্ডে বিশ্বজুড়ে বিতর্কের ঝড় উঠলেও নিজেদের পক্ষে সাফাই গেয়েছে তারা। কোম্পানিটি বলছে, এ রকম প্রযুক্তির কারণে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারছে, রাস্তায় নিরাপদে হেঁটে চলাচল করছে।
গুপ্তচরবৃত্তির এই সফটওয়্যার গোয়েন্দা ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাছে থাকায় এমনটা সম্ভব হয়েছে। এনএসও জানিয়েছে, তারা এই প্রযুক্তি পরিচালনা করে না কিংবা গ্রাহকদের সংগ্রহ করা তথ্যে তাদের ঢোকার সুযোগ নেই।
কোম্পানির এক মুখপাত্র বলেন, পেগাসাস ম্যালওয়্যারের বদৌলতে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারছেন। তারা নিরাপদে রাস্তায় চলাচল করছেন। এনক্রেপ্টেড অ্যাপের মাধ্যমে আড়ালে থাকা শিশু নির্যাতনকারীদের চক্র, সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে তদন্তে এবং তাদের প্রতিরোধে গোয়েন্দা ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সহায়তা করছে পেগাসাস।
তিনি বলেন, অন্য অনেক সাইবার কোম্পানির সঙ্গে মিলে বিশ্বের বিভিন্ন সরকারগুলোকে সাইবার গোয়েন্দাবৃত্তির যন্ত্র সরবরাহ করে আসছে এনএসও গ্রুপ। এতে অন্ধকারে থাকা ও নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থায় সামাধানযোগ্য না—এমন সব তাৎক্ষণিক বার্তা-আদানপ্রদানের অ্যাপ ও সামাজিকমাধ্যমে নজরদারি করতে পারে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। একটি নিরাপদ বিশ্ব গড়তে আমরা সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করছি।
তবে কোনো ধরনের অপব্যবহার চোখে পড়লে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে ইসরায়েলি সফটওয়্যার কোম্পানি বলছে, মানবাধিকার সুরক্ষার মধ্যেই এই প্রযুক্তির শিকড় নিহিত। বিশেষ করে বেঁচে থাকার অধিকার, নিরাপত্তা ও ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় জোর দেওয়া হচ্ছে।