সাধারন্ত আমরা অসুস্থ হয়ে পড়লে সচরাচর চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেয়ে থাকি। যার কারনে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা সেই অসুখ থেকে মুক্তি পাই। কিন্তু বেশি অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ফলে আমাদের শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।
তার আগে জেনে নেই আসলে অ্যান্টিবায়োটিক কি? অ্যান্টিবায়োটিক হলো এমন একটা উপাদান যা ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস থেকে সংগ্রহ করে অন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাসকে ধ্বংস জন্য বা তার বংশবৃদ্ধি রোধ করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
ব্যাকটেরিয়া নিজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারেনা বিধায় নিজেদের অঞ্চল থেকেই তাদের খাদ্য সংগ্রহ করার কারণে তারা একই অঞ্চলে থাকা অন্য ব্যাকটেরিয়াগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে। এক ব্যাকটেরিয়া আরেক ব্যাকটেরিয়াকে মারার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করে। এই অ্যান্টিবায়োটিকই আমরা ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করি।
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে যেমন সুফল পাওয়া যায় তেমনি অতিরিক্ত সেবনেও কিছু অসুবিধা হতে পারে। সেগুলো হলো-
ওজন বেড়ে যাওয়া: অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, ডেইরি ফার্মে পশুদের মোটা-তাজা করার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো হয়। এই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ মানুষের শরীরেও একই প্রভাব ফেলে। তাই বেশি অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ফলে ধীরে ধীরে শরীরের ওজন বেড়ে যায়।
টাইপ-১ ডায়বেটিক এর আশঙ্কা: যদিও অ্যান্টিবায়োটিক শরীরের অনেক ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করে ফেলে কিন্তু খুব কম বয়স থেকে অনেক বেশি অ্যান্টিবায়োটিক খেলে ভবিষ্যতে তাদের টাইপ ওয়ান ডায়বেটিকস হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
শরীরের প্রয়োজনীয় ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস করে ফেলে: অনেক ব্যাক্টেরিয়া আছে যা মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। যেমন ‘এইচ পাইলোরি’। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিকের উচ্চমাত্রার ডোজে এই ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস য়ে যায়। যার ফলে হাঁপানি রোগ হতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়: অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়ার সব থেকে ক্ষতিকর দিক হলো একসময় শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই আর কাজ করেনা। সহজে কোনো ইনফেকশন শুকায় না।
এ প্রসঙ্গে হলি ফ্যামিলি কলেজ এবং হাসপাতালের নাক,কান গলা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ডা.মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, সাধারণত ভাইরাল ইনফেকশন যেমন সর্দিকাশি জ্বর এসবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাবহার করা উচিত নয়। তবে যদি ইনফেকশন বা সংক্রমণ দ্বিতীয় পর্যায়ে যায় তখন দেয়া যেতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিকের মূল লক্ষ্য থাকে রোগের জীবাণু একদম মেরে ফেলা।
জাকারিয়া বলেন, “চিকিৎসক একজন রোগীর অবস্থা বুঝে ৫ থেকে ৭ দিনের একটা কোর্স দিয়ে থাকেন। কিন্তু কেউ যদি সেই সময়ের আগে, ধরেন দুই দিন খেয়ে আর খেল না, তখন যেটা হয়, ওই অ্যান্টিবায়োটিক রোগীর শরীরে অকার্যকর হয়ে পড়ে। তখন ওই রোগীর জন্য আগের চেয়ে বেশি মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক দরকার হয়ে পড়ে।”
অ্যান্টিবায়োটিকের অন্যান্য ক্ষতিকর দিকগুলো হলো-
স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ায়: অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় শারীরিক স্থূলতার ঝুঁকি থাকে।
পেটের প্রদাহ: দীর্ঘস্থায়ী অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারে অন্ত্রের প্রাচীরে ঘা সৃষ্টি করতে পারে।
লিভারের ক্ষতিসাধন: লিভারের ক্ষতিসাধনের জন্য অন্যান্য ওষুধের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক সবচেয়ে দায়ী।
এজমার জন্য দায়ী: অ্যান্টিবায়োটিক এজমা থেকে রক্ষাকারী ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করে ফেলায় এজমা হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়।
অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষতিকর দিক রোধে আমাদের যা করতে হবে-
১) ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সাধারন রোগে ভুগলেই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করা।
২) ডাক্তারের পরামর্শ মতো ডোজ ও সময় অনুসারে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা।
৩) ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্রে দেয়া ওষুধের ব্যাপারে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করা, কোন ওষুধ কেন দেয়া হয়েছে সে সম্পর্কে ধারনা নেয়া।
৪) মেয়াদোত্তীর্ণ অ্যান্টিবায়োটিক সেবন না করা।