মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:২০ পূর্বাহ্ন

কেন ক্ষুব্ধ হল ফ্রান্স যুক্তরাষ্ট্রও অস্ট্রেলিয়ার ওপর?

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ১০ Time View

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নতুন ত্রিপক্ষীয় নিরাপত্তা জোট গঠন নিয়ে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছে ফ্রান্স।

ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনা আগ্রাসন ঠেকাতে অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে ‘এইউকেইউএস’ জোট গঠনের ঘোষণা করার কয়েক দিন পরেই এই সমঝোতা বড় ধরনের সমালোচনার মুখে পড়েছে।

মিত্র দেশের কাছ থেকে এমন চুক্তি অপ্রত্যাশিত উল্লেখ করে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ত্রিদেশীয় পারমাণবিক সাবমেরিন চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্যারিসের পিঠে ছুরিকাঘাত করেছেন।

পশ্চিমা কোনো মিত্র দেশ থেকে রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠানো খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া থেকে ফ্রান্স তাদের রাষ্ট্রদূতদের এই প্রথমবারের মতো ডেকে পাঠাল।

ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, পরিস্থিতির ভয়াবহতার কথা বিবেচনা করেই তাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

শনিবার দুটি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেয়ান উভস লে ড্রাইয়ান ওই দেশ দুটিকে ‘ছলনা, বড় ধরনের বিশ্বাস ভঙ্গ ও অবজ্ঞা’ করার দায়ে অভিযুক্ত করেন।

জেয়ান উভস লে ড্রাইয়ান ফ্রান্স টু-কে বলেন, ঘটনা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের সম্পর্কের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো একটি গুরুতর রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে পরামর্শের জন্য আমরা আমাদের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়েছি, এতেই বর্তমানে দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের বিদ্যমান সংকটের মাত্রা বোঝা যায়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকদের অনেকেও নতুন এই সমঝোতার সমালোচনা করছেন এবং এর নামের উচ্চারণের সাথে মিলিয়ে জোটটিকে ‘অকওয়ার্ড’ বা ‘বেমানান’ বলেও উল্লেখ করেছেন।

চীনও এই উদ্যোগের সমালোচনা করে একে ‘স্নায়ু যুদ্ধের মানসিকতা’ বলে উল্লেখ করেছে।

কী আছে অকাস চুক্তিতে

মূলত বিরোধপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের প্রভাব মোকাবেলার জন্যই নতুন এই অকাস জোট গঠন করা হয়েছে। ওই অঞ্চলে বহু বছর ধরেই সংকট বিরাজ করছে এবং এর জের ধরে উত্তেজনাও চলছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বুধবার অকাস গঠনের কথা ঘোষণা করেন।

এই তিন নেতার এক বিবৃতিতে বলা হয়, অকাসের আওতায় প্রথম উদ্যোগ হিসেবে আমরা পরমাণু-চালিত সাবমেরিন সক্ষমতা অর্জনে সহায়তায় অঙ্গীকার করছি। এটি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতিশীলতায় এবং আমাদের যৌথ স্বার্থের সহায়তায় মোতায়েন করা হবে।

নবগঠিত অকাস জোটের তিনটি দেশ যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছে তাতে পরমাণু শক্তি-চালিত সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ তৈরির জন্য অস্ট্রেলিয়াকে প্রযুক্তি সরবরাহ করার কথা বলা হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার জন্য সাবমেরিন নির্মাণের পাশাপাশি গোয়েন্দা ও কোয়ান্টাম প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তথ্য ও প্রযুক্তি বিনিময়ের কথা বলা হয়েছে এই চুক্তিতে।

যে কারণে ক্ষুব্ধ ফ্রান্স

যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার এই নতুন উদ্যোগে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ হয়েছে প্যারিস। কারণ তারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই চুক্তির ফলে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে তাদের পূর্ব স্বাক্ষরিত বহু কোটি ডলারের একটি সমঝোতার অবসান ঘটেছে।

২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সের মধ্যে ৩,৭০০ কোটি ডলার মূল্যের সেই চুক্তি সই হয়েছিল, যার আওতায় অস্ট্রেলিয়ার জন্য ১২টি সাবমেরিন নির্মাণ করার কথা ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিষয়ক বিবিসির সংবাদদাতা বারবারা প্লেট-আশার বলছেন, অকাস চুক্তিটি ফ্রান্সের জন্য একদিকে অর্থনৈতিক ধাক্কা। তেমনি নতুন এই নিরাপত্তা চুক্তির ঘোষণা ফরাসী নেতাদের জন্য বিস্ময়করও, কারণ এবিষয়ে তাদের কোনো ধারণা ছিল না।

নতুন এই জোট গঠনের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ফ্রান্সকে এবিষয়ে অবহিত করা হয়।

ফ্রান্স বলছে, অর্থনৈতিক কারণে তারা ক্ষুব্ধ হয়নি। তাদের ক্ষোভের পেছনে কূটনৈতিক এবং নিরাপত্তা-জনিত কারণও রয়েছে।

প্যারিস থেকে বিবিসির সংবাদদাতা হিউ স্কফিল্ড বলছেন, প্যারিসে এলিজে প্রাসাদ উদ্বিগ্ন একারণে যে ওয়াশিংটন, ক্যানবেরা এবং লন্ডনের কর্মকর্তারা তাদের ক্ষোভের কারণকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করছেন এবং তাদেরকে ছোট করে দেখছেন।

ফ্রান্স বলছে সাবমেরিন চুক্তির কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে বলে তারা ক্ষুব্ধ হয়নি। বরং মিত্র দেশ হওয়া স্বত্বেও, যেভাবে ফ্রান্সকে এই দৃশ্যের বাইরে রেখে ইংরেজিভাষী তিনটি দেশের মধ্যে গোপনে আলাপ আলোচনা হয়েছে তাতে তারা ক্ষুব্ধ।

বিবিসির সাংবাদিক হিউ স্কফিল্ড বলেন, একারণেই প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ শুক্রবার রাতে তার রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তারা দেখাতে চাইছে ফ্রান্সের জন্য এটা অনেক বড় একটি বিষয়। এর ফলে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্যের সাথে ফ্রান্সের সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

অকাসের তিনটি দেশের প্রত্যেকটির সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ক রয়েছে ফ্রান্সের। বিশেষ করে আফ্রিকার সাহারা অঞ্চল ও আফগানিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসবাদ দমনে তারা এই তিনটি দেশের সঙ্গে কাজ করেছে।

অকাস চুক্তির প্রতিবাদে ওয়াশিংটন ও ক্যানবেরায় ফরাসি রাষ্ট্রদূতদের প্যারিসে ডেকে পাঠানো হয়েছে, কিন্তু নতুন এই জোটে যুক্তরাজ্যের জড়িত থাকা স্বত্বেও লন্ডনে নিযুক্ত তাদের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠানো হয়নি।

এ বিষয়ে ফরাসি সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া ব্যাখ্যায় ফ্রান্সের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন এই জোটে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা খুব গৌণ বলে মনে করে ফ্রান্স।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ফ্রান্স মনে করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর ব্রিটেন ব্রেক্সিট-পরবর্তী বিশ্বে তার নতুন ভূমিকা নির্ধারণ করা চেষ্টা করছে এবং এজন্য তারা যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর ব্রিটেনও এখন এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভূমিকা রাখতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023 Jagoroni TV
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com